মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান
হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, কারণ ব্রাজিলে স্কুলে সহিংসতা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ার পেছনে তথাকথিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সমূহ বিশেষ করে মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামের ভূমিকা খুবই স্পষ্ট । তাই তা সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে ব্রাজিলীয় আদালত ।
মন্তব্য : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম না বলে টেলিগ্রামের মতো এ সব মেসেজিং অ্যাপকে কুখ্যাত অসামাজিক মাধ্যম বললে মোটেও অত্যুক্তি হবে না। গত ১৮ এপ্রিল এক বৈঠকে ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আলেক্সান্দ্রে দে মোরায়েস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসমূহকে অনেক ক্ষেত্রে নো ম্যান্স ল্যান্ডের মত বলেছেন । কারণ , সেখানে বেআইনি কাজ করে ও বেআইনি কথা বলেও পার পাওয়া যায়। আর যদি এটাই হয় তাহলে এগুলো থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নাম ও শিরোনাম তুলে নিয়ে এগুলোকে অসামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বলাই শ্রেয় বিশেষ করে এগুলোর কর্তৃপক্ষ ও পরিচালক গণ যখন অসামাজিক বেআইনি কাজ, কথা ও বক্তব্যে বাধা দেয় না এবং এ সব মাধ্যম ও অ্যাপে অসামাজিক কার্যকলাপ ও তৎপরতায় লিপ্ত ব্যক্তিদের পরিচয় ও তথ্য তদন্তকারী কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা থেকে যখন বিরত থাকে তখন এ সব যোগাযোগ মাধ্যম ও মেসেজিং অ্যাপকে সামাজিক না বলে বরং কুখ্যাত অসামাজিক মাধ্যম ও অ্যাপ বলাই যুক্তিসংগত ও যথার্থ !!
এ সব অসামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অ্যাপ বহুলাংশেই অবৈধ অনৈতিক অসামাজিক শয়তানী ( satanic ) ধ্বংসাত্মক যোগাযোগ ও সম্পর্কের আখড়া এবং এ সব গুলোর অধিকাংশেরই পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষ পশ্চিমা দেশগুলোয় থেকে অপশ্চিমা দেশ সমূহ বিশেষ করে পশ্চিমাদের বৈরি দেশগুলোর আভ্যন্তরীন রাজনৈতিক , নৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক শান্তি - শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করে সে সব দেশে বিশৃঙ্খলা, অস্থিরতা , গোলোযোগ , ফিত্না - ফাসাদ উস্কে দিচ্ছে বা দিয়ে থাকে এ সব মাধ্যমের সাহায্যে । আসলে এ সব অসামাজিক দুর্নীতি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি কারী যোগাযোগ মাধ্যম বিশ্বব্যাপী সাম্রাজ্যবাদী পশ্চিমা বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবৈধ সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্য ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার এক মোক্ষম হাতিয়ার স্বরূপ !! প্রযুক্তি, বিজ্ঞান , বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা, মুক্তি , গণতন্ত্র , নারীবাদ, নারী স্বাধীনতা , মানবাধিকার ও ব্যক্তি স্বাধীনতা ইত্যাদি হরেক রকমের মুখরোচক বুলি ও শ্লোগান দিয়ে পশ্চিমা নিয়ন্ত্রিত এ সব অ্যাপ , যোগাযোগ মাধ্যম ও প্ল্যাটফর্ম সমূহ বিভিন্ন দেশের তরল ও কোমলমতি অনভিজ্ঞ অসচেতন তরুণ তরুণী ও শিশু কিশোর দের এমনকি অনেক বয়স্ক ব্যক্তিকেও বিভ্রান্ত করে ঐ সব দেশে সামাজিক রাজনৈতিক ও নৈতিক বিশৃঙ্খলা ও ফিতনা সৃষ্টি করছে এবং পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী পরাশক্তি সমূহের বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবৈধ হস্তক্ষেপ , আধিপত্য ও কর্তৃত্বের পথ উন্মুক্ত করছে ।
আমাদের প্রায় সবার মধ্যেই এ বাতিকটা বিদ্যমান যে আমরা পশ্চিমা মিডিয়া ( যোগাযোগ মাধ্যম ও মেসেজিং অ্যাপ সমূহ ) ও প্রতিষ্ঠান সমূহের পরিবেশিত তথ্য , খবর , সংবাদ এবং প্রকাশিত তথাকথিত সমীক্ষা, জরিপ ও পরিসংখ্যানের নাম শুনলেই তা অনুসন্ধান ও যাচাই বাছাই না করেই গ্রহণ করি যা পবিত্র কুরআনের নির্দেশেরই সুষ্পষ্ট লংঘন । কারণ পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে : " হে মুমিনগণ ! তোমাদের কাছে কোনো ফাসেক ( লম্পট , অবাধ্য , পাপাচারী , মিথ্যাবাদী অনির্ভরযোগ্য ব্যক্তি এবং হাল জমানার গ্রুপ , গোষ্ঠী , মাধ্যম ও প্রতিষ্ঠান) যদি কোনো গুরুত্বপূর্ণ খবর , সংবাদ ও তথ্য আনে তবে তা তোমরা উত্তমরূপে অনুসন্ধান ও যাচাই-বাছাই করো , যাতে ( যাচাই-বাছাই না করে ফাসেকের পরিবেশিত সংবাদ, তথ্য ও খবর গ্রহণ করলে ) তোমরা অজ্ঞতাবশত: কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতি করে না বস এবং নিজেদের কৃতকর্মের জন্য পরে তোমাদের অনুশোচনা করতে হয়। ( সূরা -ই হুজুরাত : ৬ )
یا أیها الذین آمنو إن جاءکم فاسق بنبإ فتبینوا أن تصیبوا قوماً بجهالة فتصبحوا علیٰ ما فعلتم نادمین.
বলার আর অপেক্ষা রাখে না যেপশ্চিমা বিশেষ করে মার্কিন এ সব প্রতিষ্ঠান ও মিডিয়া ফাসেক ফাজেরের (লম্পট অবাধ্য পাপাচারী মিথ্যাবাদী দুর্নীতি পরায়ণ ও অপরাধী মাধ্যম ও প্রতিষ্ঠান ) উৎকৃষ্ট নমুনা
। তাই টেলিগ্রামের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মেসেজিং অ্যাপ সমূহ আসলে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত খবর আনয়ন ও পরিবেশনকারী ফাসিক ফাজিরের উৎকৃষ্ট বাস্তব নমুনা । দেখুন : এই টেলিগ্রামের মতো অ্যাপ ও মাধ্যম সমূহ ব্যবহার করে ব্রাজিলের মতো দ্রুত উন্নয়নশীল খ্রিষ্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ ল্যাটিন আমেরিকান দেশেও নিওশ নাৎসীদের মতো ভয়ঙ্কর গ্রুপ ও গোষ্ঠীগুলো স্কুল সমূহে সহিংসতার মতো ধ্বংসাত্মক তৎপরতায় লিপ্ত । তার মানে এ সব ( অ) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মেসেজিং অ্যাপ মিথ্যাবাদী ফাসিক
হওয়ার পাশাপাশি সহিংসতা , বিশৃঙ্খলা ,গোলোযোগ ফিতনা - ফাসাদ সৃষ্টির মতো ধ্বংসাত্মক তৎপরতায়ও লিপ্ত যার উদাহরণ হচ্ছে ব্রাজিলে টেলিগ্রাম থেকে স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে নিও নাৎসীদের সহিংসতামূলক তৎপরতা । আর এ ধরনের ধ্বংসাত্মক তৎপরতা শুধু টেলিগ্রামেই সীমাবদ্ধ নয় ফেস বুক , ইনস্ট্রাগ্রাম ও অন্যান্য অ্যাপেও রয়েছে এ ধরনের তৎপরতার অজস্র নজীর। আর এ কারণেই এ সব তথাকথিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মেসেজিং অ্যাপ এবং এর সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী মুফসিদ ফিল্ আর্দ্ব্ ( যমীনের বুকে ফিতনা ফাসাদ , গোলোযোগ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি কারী ) এবং যালেম, অন্যায়কারী ও পাপীদের সহায়তাকারীর ( আ'ওয়ানুয যালামাহ أعوان الظلمة) উৎকৃষ্ট বাস্তব নমুনাও।
মহানবী (সা) বলেছেন : যালেমগণ এবং তাদের সহায়তাকারী ও সহযোগীগণ দোযখের আগুনের মধ্যেই রয়েছে ( এবং থাকবে )। ( দ্র: মীযানুল হিকমাহ্ , খ :৬ , হাদীস নং ১১৬০৯ )
قال رسول الله (ص) : الظلمة و أعوانهم في النار .
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন : আর (তোমরা ) পূণ্যকর্ম ও তাকওয়া ( সাবধানতা ) অবলম্বনে ( ও আত্ম সংযমে ) একে অপরকে সহায়তা কর এবং গুনাহ ( পাপ ) ও সীমা লঙ্ঘনের কাজে পরস্পরকে সহায়তা কর না ; মহান আল্লাহকে ভয় কর ; নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি দানে অতি কঠোর। ( সূরা -ই মায়েদা : ২
و تعاونوا علی البرّ و التقویٰ • و لا تعاونوا علی الإثم و العدوان • و اتّقُوا الله • إنّ الله شدید العقاب .
এবং এ আয়াতে :
এবং যারা যুলুম ( অন্যায় ও অবিচার ) করেছে তাদের প্রতি তোমরা ঝুঁকে পড় না , তবে ( ঝুঁকে পড়লে ) তোমাদেরও ( দোযখের ) আগুন স্পর্শ করবে এবং আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোন অভিভাবক থাকবে না ; অত:পর তোমরা সাহায্য প্রাপ্ত হবে না । ( সূরা -ই হূদ : ১১৩ )
( আর যালেমের প্রতি ঝুঁকে পড়া নি:সন্দেহে যালেমকে তার অন্যায় ও জুলুমে সাহায্য করা , তার প্রশস্তি গাওয়া ও তার অন্যায় কাজে শরীক ও দোসর হওয়ারই নামান্তর । আর টেলিগ্রামের মতো এ সব অসামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মেসেজিং অ্যাপ আসলে যুলুম ও অন্যায়ে যালেম সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহের সহচর ও দোসর এবং অংশীদার । আর সেকারণে এগুলোও যালেম । )
و لا ترکنوا إلی الذین ظلموا فتمسّکم النار ، و ما لکم من دون الله من أولیاء ثمّ لا تُنصَرون .
অতএব দেশ ও জাতি সমূহের সার্বিক স্থিতিশীলতা , স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি স্বরূপ এ সব অসামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন ও পূর্ণ সচেতন হওয়া নেহায়েতই যুগের ন্যায্য দাবি ।